নিউজ ডেস্ক: রাজ্যে আট হাজারের বেশি স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ৫০ এর নীচে। কিছু স্কুলে ছাত্র-ছাত্রী একেবারে শূন্য। এই অবস্থায় ওইসমস্ত স্কুলগুলি অন্য কোনো দপ্তর করার ভাবনা চলছে বলে খবর মিলছে।
রাজ্যে ৮ হাজারের বেশি সরকারি স্কুলে পড়ুয়া সংখ্যা নেমে গেছে ৫০ এর নীচে। দু-শোর বেশি স্কুলে নেই ১ জন পড়ুয়াও। উত্তরবঙ্গ থেকে দক্ষিণবঙ্গ, বেশিরভাগ জেলাতেই একই ছবি। রাজ্য সরকারের স্কুল শিক্ষা দফতরের তথ্যে বাড়ছে উদ্বেগ।
রাজ্যেই ৮ হাজার সরকারি সাহায্য প্রাপ্ত এবং স্পন্সরড স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা, আর তাও স্রেফ পড়ুয়ার অভাবে । কলকাতারও অনেকগুলি স্কুল এই তালিকার অন্তর্ভুক্ত। প্রায় সব জেলা স্কুলই এই তালিকায় রয়েছে। এর মধ্যে যেমন রয়েছে প্রাক প্রাথমিক, প্রাথমিক স্কুল, তেমনই রয়েছে উচ্চ প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্কুলগুলিও (school closed) । এই তথ্য উঠে এসেছে এক সরকারি রিপোর্টেরই !
এমত পরিস্থিতিতে স্কুল শিক্ষা দফতর অন্যান্য দফতরকে তালিকা পাঠিয়ে আর্জি জানিয়েছে, ফাঁকা স্কুল কাজে লাগানোর জন্য । শূন্য স্কুলে সরকারি বেসরকারি যৌথ উদ্যোগেরও পরিকল্পনা চলছে। কেন এত ছাত্রছাত্রী কমছে সরকারি স্কুলে? উঠছে প্রশ্ন। শিক্ষক সংগঠনের একাংশের অভিযোগ, সরকারের নীতি আদতে স্কুলগুলিকে বন্ধ করার জন্য।
এই নিয়ে বিশিষ্ট শিক্ষক কিংকর অধিকারী বলেন, “ছাত্র সংখ্যা কম থাকার অজুহাতে সরকার ধীরে ধীরে এই অসংখ্য বিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়ার দিকে যাবে। ভবিষ্যতে এই ৮ হাজারের বেশি বিদ্যালয় যদি বন্ধ করে দেওয়া হয় তাহলে বিদ্যালয় প্রতি অন্ততপক্ষে ৫ জন করে শিক্ষক ধরলে প্রায় ৪০ হাজার শিক্ষক শিক্ষার্কর্মী পদ অবলুপ্ত হয়ে যাবে। শুধু কি তাই? যে বিদ্যালয় গুলিতে পঞ্চাশের নিচে ছাত্রছাত্রী রয়েছে তারা কোথায় যাবে? তাদের অধিকাংশ অভিভাবকগণ অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের, প্রান্তিক গোষ্ঠীর মানুষ। এই বিদ্যালয়গুলি বন্ধ হয়ে গেলে তাঁদের সন্তানরা মিড ডে মিল থেকে বঞ্চিত হবে। দূরত্বের কারণে তাঁদের সন্তানদের অন্য বিদ্যালয়ে পাঠাবে না। ব্যাপকভাবে ড্রপ আউট বাড়বে। দরিদ্র এবং প্রান্তিক গোষ্ঠীর মানুষের সন্তানরা শিক্ষার আঙিনা থেকে দূরে সরে যাবে।”
তিনি আরও বলেন, “বর্তমান রাজ্য সরকার কিংবা কেন্দ্রীয় সরকার যে নতুন শিক্ষা নীতি কার্যকর করতে চলেছে তার ফল আরো মারাত্মক হতে চলেছে। এবার প্রাথমিকের পাশাপাশি সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষালয় গুলি দ্রুত ধ্বংসের দিকে যাবে। আজ যাঁরা অবাক হচ্ছেন আগামীতে আরো হাজার হাজার বিদ্যালয় এভাবে ধ্বংসের দিকে এগোলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থা আর কতদিন টিকবে সেটাই এখন প্রশ্নের। এর প্রতিকারে সচেতন ভাবে শিক্ষক এবং অভিভাবকদের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ প্রয়োজন। তা যদি না করা যায় তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে শুধু সরকার নয়, দায়ী থাকবেন অভিভাবক এবং শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী সবাই।”