Kode Iklan atau kode lainnya

NRS হাসপাতালে ডোমপদে চাকরিপ্রার্থী স্নাতকে ইতিহাসে First Class গোল্ড মেডেলিস্ট স্বর্ণালী


নিউজ ডেস্ক: হাসপাতালের লাশ কাটা ঘরে ছ’জনকে নিয়োগ করা হবে জানিয়ে বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। সেই কাজ করতে চেয়ে কম করে দু’হাজার আবেদনপত্র জমা পড়ে।  এনআরএস সূত্রে জানানো হয়েছে, দু’হাজার আবেদনের মধ্যে ৭৮৪ জনকে পরীক্ষায় বসার জন্য অ্যাডমিট কার্ড দেওয়া হয়। ‘অতি যোগ্য’ প্রার্থীদের ভিড়ে ডাক পাননি ডোমের পরিবারের সঙ্গে যুক্ত থাকা বহু প্রার্থীই।

এরই মধ্যে একজন পরীক্ষার্থীর কথা সামনে এসেছে,যা বাংলা সহ গোটা দেশের ভয়াবহ বেকারত্বের দিকটি তুলে ধরে। ডোম পদে নিয়োগের জন্য পরীক্ষা দিয়েছেন স্নাতকে ইতিহাসের গোল্ড মেডেলিস্ট। শিবপুরের বাসিন্দা স্বর্ণালী সামন্ত এনআরএস কলেজে ডোম পদে চাকরির জন্য আবেদন জানিয়েছেন।

রবিবার দুপুর ১২টায় শুরু হয় পরীক্ষা। বেশ কিছু ইঞ্জিনিয়ারের পাশাপাশি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাশ পড়ুয়ারাও এক ঘণ্টার এই পরীক্ষায় বসেন। তবে অ্যাডমিট কার্ড নিলেও অনেকে এ দিন পরীক্ষা দিতে আসেননি বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর। বিভিন্ন হাসপাতালে ডোমের অস্থায়ী পদে কাজের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কয়েক জন যুবকও পরীক্ষা দিয়েছেন। 

জানা গেছে, খুবই অল্প বয়সে বিয়ে করেছিলেন স্বর্ণালী। শিবপুরে দেবব্রতর সঙ্গে অল্প বয়সেই সংসার পাতেন তিনি। তবে বিয়ের পরেও পড়াশোনা ছাড়েন নি। স্নাতকে ইতিহাসে পড়াশোনা করে স্বর্ণ পদক পান স্বর্ণালী। সরকারি চাকরি পাওয়ার জন্য হাজার চেষ্টা করলেও সফল হন নি তিনি। এরপর বাধ্য হয়ে একটি বেসরকারি সংস্থায় রিসেপশানিস্টের কাজ করতে হয় তাঁকে।

স্বর্ণালীর স্বামী দেবব্রত উবের-এর বাইক চালান। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের হলেও কোনওমতে সুখে শান্তিতে কাটছিল জীবন। কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে ছোট্ট সংসারে নেমে আসে কষ্টের কালো মেঘ। দম্পতির একমাত্র মেয়ের খাওয়াদাওয়ার বন্দোবস্ত করে সংসার টানা খুব কষ্টকর হয়ে উঠেছিল তাঁদের। আর সেই কারণেই এনআরএসে ডোম পদে চাকরির আবেদন করেন স্বর্ণালী।

স্বর্ণালী জানান, চাকরির বিজ্ঞাপনে লেখা ছিল ল্যাবরেটরি অ্যাটেনডেন্ট। তিনি জানতেন না যে, ওটি ডোমপদের বিজ্ঞপ্তি ছিল। যদিও, পরে জানতে পেরেও আর পিছিয়ে আসেন নি তিনি। স্বর্ণালী জানান, একটা চাকরি খুবই দরকার। সরকারি চাকরি হলে নিরাপদ হয়। মেয়েরা সবই পারে। নার্স, আয়া সব কাজ মেয়েরাই করে। তাই ডোমের কাজ পারব না কেন? এই কারণেই আর পিছিয়ে আসিনি।

চাকরির আবেদন করার পর রবিবার এনআরএসে গিয়ে লিখিত পরীক্ষাও দিয়ে এসেছেন স্বর্ণালী। এখন শুধু ফলাফলের অপেক্ষা। স্বর্ণালী জানান, আমি মনে প্রাণে চাইছি চাকরিটা হয়ে যাক। কারণ চাকরিটা হলে আমার এই পরিবারতা বেঁচে যাবে। নাহলে অনেক বিপদের সম্মুখীন হতে হবে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ৭৮৪ জনকে অ্যাডমিট কার্ড দেওয়া হলেও এ দিন পরীক্ষায় বসেন ২৮৪ জন। দুর্গাপুর থেকে পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন তন্ময় সরকার নামে এক যুবক। তিনি বলেন, ‘‘কাজ করি একটি বেসরকারি সংস্থায়। চাকরির কোনও নিশ্চয়তা নেই। করোনার দরুন অনিশ্চয়তা আরও বেড়েছে। তাই এই সরকারি পরীক্ষায় বসার জন্য আবেদন করেছিলাম।’’ পরীক্ষা দিয়ে বেরিয়ে বছর পঁচিশের এক যুবক (নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, ‘‘ই়ঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেছি। ভেবেছিলাম, ডোমের চাকরিতে প্রতিযোগী কম হবে। তাই আবেদন করি। তা দেখছি, এখানেও প্রচুর লোক পরীক্ষা দিলেন।’’

ডোম নিয়োগের পরীক্ষা দিয়ে বেরিয়ে বছর আঠাশের স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী এক পড়ুয়া বলছিলেন, ‘‘পড়াশোনা শেষ করার পরে তো চার-চারটে বছর কেটে গেল। বিভিন্ন সংস্থার দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে ইন্টারভিউ দিয়েও লাভ হয়নি। যা দু’-একটা চাকরি জুটছে, তা-ও বাংলার বাইরে। বেতন যে খুব বেশি, তা-ও নয়! কী করব! কিছু তো করতে হবে! তাই ডোমের পদে পরীক্ষা দিলাম।’’ 

হাসপাতাল জানিয়েছে, আবেদনকারীদের মধ্যে অধিকাংশই উচ্চশিক্ষিত। ইঞ্জিনিয়ার-সহ বিভিন্ন বিষয়ের স্নাতকোত্তররাও রয়েছেন তালিকায়। ছ’টি শূন্যপদ। ন্যূনতম যোগ্যতা অষ্টম উত্তীর্ণ। তা ছাড়া প্রার্থী ডোমের পরিবারের সঙ্গে যুক্ত হলে বা তাঁর লাশঘরে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকলে অগ্রাধিকার পাবেন বলেও জানিয়েছিলেন এনআরএস কর্তৃপক্ষ। তবে আবেদনকারীরা সেই সব শর্তের পরোয়া করেননি। বরং প্রচুর স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী ওই কাজ করতে চেয়ে আবেদন করেছেন।

ডোমের চাকরির পরীক্ষায় উচ্চশিক্ষিতদের এ ভাবে আবেদন ও অংশগ্রহণে দেশের বেকারত্বের হতাশার দিকটিই যে প্রকট হচ্ছে, রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের একাংশও তা মেনে নিচ্ছেন। 

close