নিউজ ডেস্ক: শিক্ষক নিয়োগ বিতর্ক যেন স্কুল সার্ভিস কমিশনের পিছু ছাড়ছে না। আদালতের নির্দেশে প্রকাশিত মেধাতালিকা নিয়ে নতুন অভিযোগ দায়ের হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে। অভিযোগ সত্যি প্রমাণিত হলে নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিলের হুঁশিয়ারি দিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
একটি পদের জন্য নির্দিষ্ট অনুপাতের তুলনায় অনেক বেশি প্রার্থীদের ইন্টারভিউতে ডাকা হয়েছে। এই মর্মে এবার ২০১৬ স্কুল সার্ভিস কমিশনে মেধাতালিকা নিয়ে সামনে এল বিস্ফোরক অভিযোগ৷ বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, যদি এই গুরুতর অভিযোগ সত্যি হয়, তাহলে গোটা নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করতে হবে। কারণ সেক্ষেত্রে নিয়োগ বিধি না মানার অভিযোগ মান্যতা পাবে। স্কুল সার্ভিস কমিশনকে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশ, পনেরো দিনের মধ্যে প্রত্যেকটি বিষয় ধরে ধরে কোথায় কতজনকে বাড়তি ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাকা হয়েছে, তাদের তালিকা প্রকাশ করতে হবে। তাদের মধ্যে কারা চাকরি পেয়েছে, তাও জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।
একইসঙ্গে বিশ্বজিৎ বিশ্বাস নামে এক প্রার্থীর নিয়োগ হয়েছে, তার ক্ষেত্রে নম্বর জালিয়াতির অভিযোগ আসায় আলাদা হলফনামা দিয়ে বিষয়টির ব্যাখ্যা দিতে হবে কমিশনকে ৷ শিউলি খাতুন নামে এক চাকরি প্রার্থীর অভিযোগ, ২০১৬ এসএলএসটি নিয়োগ সংক্রান্ত ইন্টারভিউতে দেখা গিয়েছে প্রায় সব বিষয়ে অতিরিক্ত প্রার্থীকে ডাকা হয়েছে। আদালতে কমিশনের বক্তব্য, বে-আইনি নিয়োগ অভিযোগে সিবিআই তদন্ত করছে। তাদের তদন্ত শেষ হলে কমিশন বিষয়টি খতিয়ে দেখবে।
কিন্তু বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় কমিশনের এই বক্তব্য বাতিল করে নির্দেশ দেন, যাদের অতিরিক্ত হিসাবে ডাকা হয়েছিল, কমিশন যেন সেই সকল প্রার্থীদের বিষয়, ক্যাটেগরি ও তারিখ উল্লেখ করে অবিলম্বে তা আদালতকে জানায় ৷ তাদের মধ্যে কাউকে নিয়োগ করা হয়েছিল কি না, তাও আদালতকে জানাতে হবে ৷ 16 অগস্টের মধ্যে কমিশনকে এই তথ্য দিতে হবে। 18 অগাস্ট শুনানি হবে এই মামলার।
কিছুদিন আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছিলেন, "শিক্ষকপদে ১৮০০০ চাকরি রেডি, আদালতের কারণে দেওয়া যাচ্ছে না" এই মর্মেই আজ একটি নিয়োগ সংক্রান্ত মামলার শুনানিতে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের উদ্দেশ্যে সতর্কবার্তা দিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। একইসঙ্গে রাজ্যের শিক্ষা সচিবকে এই চাকরি সংক্রান্ত নথি সবিস্তারে পাঠানোর নির্দেশ দেয় আদালত।
আদালতের নিষেধাজ্ঞা না থাকা স্বত্তেও ২৫০০০ চাকরির বিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়নি কেন? পাল্টা প্রশ্ন তুললেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি বলেন, "বিচারবিভাগ সবসময় রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মন্তব্য হজম করবে না। প্রয়োজনে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।"
রাজ্যের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী মোট শূন্যপদের সংখ্যা ১৮ হাজারের বেশি আছে। যা জানা যাচ্ছে, তাঁতে একাদশ-দ্বাদশে শূন্যপদ-৫,৫২৭টি, নবম-দশমে শূন্যপদ- ১৩,৮৪২টি, উচ্চ প্রাথমিকে শূন্যপদ-১৪,৩৩৯ এবং প্রাথমিকে শূন্যপদ-৩,৯৩৬টি। এছাড়াও ২ হাজার ৩২৫ টি প্রধান শিক্ষকের পদ আছে।
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় মন্তব্য করেন, "এত শূন্য পদ থাকা সত্ত্বেও নিয়োগ হচ্ছে না কেন? রাজ্যের একজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা ব্যক্তি বিভিন্ন সময়ে বলছেন যে আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে নিয়োগ করা যাচ্ছে না। কিন্তু প্রাথমিকের ৩৯৩৬ শূন্যপদে আদালতের নিষেধাজ্ঞা নেই। কেন নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে না সেটা বোধগম্য নয়।"
কেন ৩৯৩৬ টি শূন্যপদে নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে না তা হলফনামা দিয়ে জানাবেন স্কুল শিক্ষা দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টরেট। আগামী ১৭ ই আগস্টের মধ্যে হলফনামা জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও হেডমাস্টার স্তরে নিয়োগে আদালতের কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই। ১৮০০০ এর বেশি শূন্যপদ রয়েছে। এগুলিতে নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু করা যেতে পারে। কোনও আইনি বাধা নেই।