Kode Iklan atau kode lainnya

স্টাফরুমে ঢুকে শিক্ষিকাকে অনৈতিক ও বর্বরোচিত হেনস্থার তীব্র প্রতিবাদ শিক্ষকদের

 

নিউজ ডেস্ক: ক্লাস না করে মোবাইল নিয়ে থাকায় এক ছাত্রীকে শাসন করেছিলেন শিক্ষিকা। কান টেনে ধরেছিলেন শিক্ষিকা। আর তাতে ‘শাস্তি’র খাঁড়া নামল ওই শিক্ষিকার উপর। স্কুলের স্টাফ রুমে ঢুকে ওই শিক্ষিকাকে প্রায় উলঙ্গ করে মারধরের অভিযোগ উঠল ওই ছাত্রীর অভিভাবকদের বিরুদ্ধে। 

দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার ত্রিমোহিনী প্রতাপচন্দ্র উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এই ঘটনায় তোলপাড় এলাকা। অবিলম্বে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি উঠেছে স্কুলের তরফে। এই ঘটনায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়েছে বিদ্যালয়ে। আতঙ্কিত অন্যান্য শিক্ষিক-শিক্ষিকারাও।

অভিযোগ, গতকাল অর্থাৎ শুক্রবার দুপুরে হঠাৎই স্কুল চলাকালীন ওই ছাত্রীর পরিবার ও বেশ কিছু বহিরাগত ঢুকে পড়ে ত্রিমোহিনী প্রতাপ চন্দ্র হাইস্কুলে। প্রথমে স্কুলের প্রধান শিক্ষককে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখানো হয়। অভিযোগ, তখনই বেশ কিছুজন ঢুকে পড়ে শিক্ষকদের কমন রুমে। সেখানে ঢুকে শিক্ষিকার শাড়ি টেনে খুলে দেয় তারা। শারীরিক হেনস্থার পাশাপাশি অশ্লীল ভাষায় ওই শিক্ষিকাকে গালিগালাজও করা হয় বলে অভিযোগ।

ঘটনায় রীতিমতো নিন্দার ঝড় উঠেছে সবমহলে। স্কুলের প্রাক্তনীদের তরফে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। প্রাক্তনীরা স্কুলে পৌঁছাতেই প্রধান শিক্ষক স্কুল থেকে তড়িঘড়ি পালিয়ে যান। 

এই বিষয়ে মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির (STEA) দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলা সম্পাদক অনিমেষ হালদার বলেন, “দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার হিলি ব্লকের ত্রিমোহিনী প্রতাপ চন্দ্র উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এক ছাত্রীকে শাসন করার অপরাধে কিছু অভিভাবক স্কুলের মধ্যে ঢুকে স্টাফরুমে পঞ্চাশোর্ধ্ব শিক্ষিকাকে গালিগালাজ করা, বস্ত্র খুলে দেওয়া ছাড়াও যেভাবে বর্বরোচিতভাবে হেনস্থা করেছে এবং ঘটনার পর যেভাবে ঐ স্কুলের প্রধান শিক্ষক সহ স্থানীয় শিক্ষা প্রশাসন বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছে তা অত্যন্ত ধিক্কারজনক। এই ঘটনায় প্রতিবাদ জানানোর কোনো ভাষা নেই। আমরা আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে কিভাবে রক্ষা করবো, এই ঘটনা সেই প্রধান প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে!”

তিনি আরও বলেন, “শিক্ষক, শিক্ষিকা, শিক্ষাকর্মী সহ সমাজের সকল শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিদের এই ঘটনার বিরূদ্ধে একজোট হয়ে প্রতিবাদে সামিল হওয়ার অনুরোধ করছি। অনৈতিক এই হেনস্থার তীব্র প্রতিবাদ ও মানসিকভাবে ওই মাননীয়া শিক্ষিকার পাশে থাকার আহ্বান জানিয়ে দোষীদের কঠোর শাস্তি দাবি করছি। সাথে সাথে ঐ সমস্ত অবিবেচক অভিভাবকদের মানসিক সুস্থতা কামনা করছি। তবে অন্ধকারের মাঝে আলোক বিন্দুর সন্ধান মিলেছে। গতকাল ঐ স্কুলের বর্তমান-প্রাক্তণ শিক্ষার্থীরা একজোট হয়ে শিক্ষিকার সম্মান রক্ষায় ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে পথে নেমেছে যা ওই শিক্ষিকার সহকর্মীরা পারেননি। আর চাপে পড়ে অবশেষে প্রধানশিক্ষক স্থানীয় থানায় অভিযোগও দায়ের করেছেন।”                       

এই নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী-শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক কিংকর অধিকারী বলেন, “দক্ষিণ দিনাজপুরে একটি স্কুলের একজন শিক্ষিকার উপর যেভাবে শ্লীলতাহানি এবং আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে তা অত্যন্ত উদ্বেগ জনক। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ করছি এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি। এই ঘটনার বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হওয়ার জন্য আহ্বান জানাই।”

এপ্রসঙ্গে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক কমল কুমার জৈন বলেন, ‘এক ছাত্রীকে এক শিক্ষিকা শাসন করেছিল। আলোচনা চলছিল। তখনই জনতা উত্তেজিত হয়ে যায়। শিক্ষিকার সঙ্গে যা হয়েছে তা কাম্য ছিল না। প্রশাসনের মধ্যস্থতায় বিষয়টি মিটমাট হয়ে গিয়েছে। মিটমাট হয়ে যাওয়ায় মামলার দরকার নেই।’

close