Kode Iklan atau kode lainnya

‘কলার ধরে আনা মন্তব্য প্রত্যাহার করছি’, এজলাসে সাক্ষাৎ বিচারপতি গাঙ্গুলি ও অরুণাভ ঘোষের, কি কথা হল দুজনের?

নিউজ ডেস্ক: তবে কি এবার ‘জ্যাঠামশাই' বিতর্কের অবসান হচ্ছে? 'কংগ্রেসি' আইনজীবীর সঙ্গে এজলাসে সাক্ষাৎ করলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁদের মধ্যে বেশ কিছুক্ষণ কথা হয়। এদিন হালকা চালেই কথা হয় দুজনের। 

এদিন আইনজীবী অরুণাভ ঘোষ এজলাসে আসতেই তাঁকে দেখে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় জানতে চান তিনি তাঁর ওপর রাগ করেছেন কিনা। একই সঙ্গে বিচারপতি এও বলেন, তাঁর ওপর কোনও ক্ষোভ নেই। এদিকে, আইনজীবী অরুণাভ ঘোষ বলেছেন, তিনি বিচারপতিদের সতর্ক করেন মাত্র। কারণ অনেক আইনজীবী তাদের মক্কেলদের বাঁচাতে চায়। যদিও বিচারপতির প্রতি তাঁর ভালোবাসা আছে বলেই অবগত করেন। এই প্রেক্ষিতেই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় জানান, দু'জনের মধ্যে যা হয়েছে তা তিনি ভুলে যেতে চান। তিনি কলার ধরে আনা সম্পর্কিত যে মন্তব্য করেছেন তা প্রত্যাহার করছেন। পাশাপাশি তিনি আরও বলেন, তাঁদের মধ্যে কী হয়েছে তা কিন্তু তিনি আজ থেকে ভুলে গেলেন। তাঁর স্বীকারোক্তি, তিনি কখনও কখনও একটু বেশি কথা বলে ফেলেন।

আজ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় তাঁকে আরও একবার মনে করিয়ে দেন, তাঁর বিরুদ্ধে যদি তাঁর কোনও ক্ষোভ থেকে থাকে তাহলে সরাসরি এজলাসে এসে যেন তিনি বলেন। আজ তিনি এসেছেন খুব ভালো লেগেছে। বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, যে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল তার অবসান হওয়ার প্রয়োজন ছিল। এজলাসে উপস্থিত অন্যান্য আইনজীবীদের উদ্দেশ্যেও তিনি বলেন, এটার খুব প্রয়োজন ছিল। অরুনাভ এসেছিলেন, ভাল হল।

স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ দুর্নীতি মামলার শুনানির সময়ে বৃহস্পতিবার কারও নাম না করে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেছিলেন, “কোনও এক জ্যাঠামশাই বলে বেড়াচ্ছেন অভিজিৎবাবু এটা করেননি অভিজিৎবাবু ওটা করেননি। কে এটা করছেন আমি জানি। তাঁর বিরুদ্ধে আমি তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করছি। এক-দু’মাসের মধ্যে তিনি টের পাবেন।’

বিচারপতি মন্তব্যের চব্বিশ ঘণ্টাও কাটল না ফের তাঁর প্রতিক্রিয়া জানান কলকাতা হাইকোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী অরুণাভ ঘোষ। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের মন্তব্য সম্পর্কে অরুণাভ ঘোষ বলেন, “আমি জরুরি অবস্থার বিরোধিতা করে জেল খেটেছি। বিধানসভায় স্পিকারের অন্যায়ের প্রতিবাদ করাতেও আমার জেল হয়েছিল। প্রয়োজন হলে আবার জেলে যাব। তবু বিচারের নামে বিচারপতির অনাচার মানব না।”

রীতিমতো চ্যালেঞ্জ করে আইনজীবী অরুণাভ আরও বলেন, “ওই বিচারপতির ক্ষমতা থাকলে আমাকে জেলে পাঠান। ক্ষমতা থাকলে আমার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করুন। দেখি উনি কতদূর যেতে পারেন।”

বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ও বৃহস্পতিবার বলেছিলেন, “জ্যাঠামশাই বলে বেড়াচ্ছেন আমি আইনের এ বি সি ডি জানি না। কলেজিয়ামের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করছেন তিনি। তিনি নিজে কি এ বি সি ডি জানেন? জ্যাঠামশায়ের পারফরম্যান্স অবশ্য সবাই জানে। কোনও মামলাই নেই তাঁর কাছে।”

শুক্রবার অরুণাভ বলেন, “অনেকে বলছেন, এজলাসে বসে এক বিচারপতি আমাকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। জ্যাঠামশাই বলে কটাক্ষ করেছেন। যদি ধরে নিতে হয় আমাকে উদ্দেশ্য করেই বলেছেন, তাহলে বলি, আমি ৪৫ বছর বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত। তারপরও মনে করি, এখনও জানার অনেক বাকি। তাই প্রতিদিন বই খুলে বসি। গ্রিক দার্শনিক সক্রেটিসকে উদ্ধৃত করে বলেন, আমি নিজের ব্যাপারে বলব, আমি এটাই জানি যে আমি কিছুই জানি না”।

শিক্ষা দুর্নীতির মামলায় বিচারের নামে গ্যালারি শো বিচারপতির, এমনই মন্তব্য করেছিলেন আইনজীবী অরুণাভ ঘোষ।

অরুণাভ বলেন, ওই বিচারপতি কাউকে চাকরি থেকে অপসারণ করছেন। বেতন ফেরত দেওয়ার নির্দেশ জারি করছেন। কাউকে পদ থেকে সরিয়ে দিচ্ছেন। অথচ, নির্দেশ জারির আগে তাঁদের বক্তব্য শুনছেন না।

অরুণাভর আরও বক্তব্য, বিচারপতির কাজ উপযুক্ত কর্তৃপক্ষকে বলা ব্যবস্থা নিতে। তাছাড়া অভিযোগ যত গুরুতর হোক না কেন, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ সকলের প্রাপ্য। কিন্তু শিক্ষা সংক্রান্ত মামলায় বিচার ব্যবস্থার সেই মৌলিক কর্তব্য অগ্রাহ্য করছেন বিচারপতি।

নিয়োগ সংক্রান্ত মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দ্রুত ও ন্যায় বিচারের নামে হাততালি কুড়ানোর চেষ্টা করছেন বলে মনে করেন রাজ্যের বিশিষ্ট আইনজীবী অরুণাভ। তাঁর কথায়, বিচারপতি একতরফা নির্দেশ জারি করছেন। অনেক ক্ষেত্রে অভিযুক্ত পক্ষের, আইনজীবীর বক্তব্য, শুনছেন না। তিনি বিচারের নামে প্রহসন করছেন।

অরুণাভ বলেন, বিচারপতি সিবিআই তদন্তের (CBI Probe) নির্দেশ দিতে পারেন। কিন্তু তিনিই ঠিক করে দিচ্ছেন কে কখন সিবিআই দফতরে হাজিরা দেবেন। অথচ যাঁদের এই নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে তাঁরা কেউ ফেরার আসামী নন। তাছাড়া, আইনের পথে কেউ সিবিআই-কে এড়ানোর সুযোগ নিতেই পারেন। সিবিআইয়ের কাছে কে যাবে, কখন যাবে সেটা ঠিক করবে তদন্তকারী সংস্থা। বিচারপতি কী করে দিন তারিখ ঠিক করে দিতে পারেন?

বিচারপতি গ্যালারি শো করছেন। অনেক মানুষ মনে করছেন তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন। তাই হাততালি পাচ্ছেন। বাস্তবে, বিচারের নামে অবিচার করছেন।

রাজ্যের এই বিশিষ্ট আইনজীবী রাজ্য কংগ্রেসের (Congress) শীর্ষ স্তরের নেতা। রাজনীতিতে তিনি বর্তমান সরকারের ঘোরতর বিরোধী বলে পরিচিতি। আদালতও একাধিক মামলায় রাজ্য সরকারকে নাস্তানাবুদ করেছেন। নারদ মামলায় এমনকি অস্বতিকর প্রশ্নের মুখে ফেলেন এক কার্যনির্বাহী প্রধান বিচারপতিকেও। তবে যেভাবে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় রায় দিচ্ছেন তাতে খুশি নন আইনজীবী অরুণাভ ঘোষ।

বৃহস্পতিবার আদালতে শুনানির সময়ে তাঁর মন্তব্য কোনও আইনজীবীর নাম স্পষ্ট করে বলেননি বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। শুক্রবার অরুণাভ ঘোষও কোনও বিচারপতির নাম করেননি। তবে তাঁর কথার একটা ধারাবাহিকতা আছে এবং তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে চর্চা শুরু হয়েছে।

close