Kode Iklan atau kode lainnya

কলেজের চাকরিতে মেধা তালিকাভুক্তদের নম্বর প্রকাশে অনীহা কমিশনের : দুর্নীতি প্রকাশের ভয় নয় তো?

 

নিউজ ডেস্ক:  ২০১৮ সালের কলেজ সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে বারবার নিয়োগ না পাওয়া মেধা তালিকাভুক্ত প্রার্থীরা সরব হয়েছেন।  তাদের দাবি উচ্চ মেধা সম্পন্ন; এমফিল, পিএইচডি, পোস্ট ডক্টরেট করা প্রার্থীরা মেধা তালিকার পিছনে পড়ে রয়েছেন অথচ অনেক কম যোগ্যতা সম্পন্ন বহু প্রার্থীকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ইন্টারভিউতে চল্লিশ শতাংশ নম্বর রেখে মেধা তালিকার সামনে রেখে চাকরি দেওয়া হয়েছে। অনেকের অ্যাকাডেমিক নম্বরও বাড়ানো কমানো হয়েছে বলেও তাদের আশঙ্কা। কারণ ইতিমধ্যে তথ্য জানার অধিকারের সহায়তায় দু-তিনটি এমন তথ্য বাইরে আসায় কলকাতা হাইকোর্টে কেসও রুজু করেছে প্রার্থীরা। 

২০১৮ পশ্চিমবঙ্গ কলেজ সার্ভিস কমিশনের মেধা তালিকাভুক্ত প্রার্থীদের নামের পাশে কোনো তথ্যই উল্লেখ করা হয়নি। ২০১৮ কলেজ সার্ভিস কমিশনের মেধা তালিকাভুক্ত সংগঠনের পক্ষ থেকে সকলের নামের পাশে নম্বর প্রকাশের দাবি বহুবার  প্রকাশ্য মিডিয়ার সামনেও করা হয়েছে। কিন্তু কলেজ সার্ভিস কমিশন তাতে কোনোই কর্ণপাত করেনি। 

বিগত কয়েক মাস আগে  তথ্য জানার অধিকার (RTI) আইনে বহু প্রার্থী তার নিজের নম্বর এবং নিজের বিষয়ে সকল মেধা তালিকাভুক্ত প্রার্থীর নম্বর জানতে চান। কয়েক মাস পেরিয়ে গেলেও কমিশন কোনো উত্তর দেয়নি। শেষে ফার্স্ট অ্যাপিল করলে যে উত্তর তারা পান তাতে আশ্চর্যজনকভাবে দেখা যায় সারা জীবন ধরে একজন প্রার্থী গড়ে যত নম্বর পেয়ে এসেছেন, তার দুই বা তিন ভাগের থেকেও কম নম্বর ৪০ নম্বরের ইন্টারভিউতে তাদের দেওয়া হয়েছে। ভালো ছাত্র-ছাত্রীর তকমা এক লহমায় চুরমার হয়ে গিয়েছে তাদের। কিন্তু আশ্চর্য বিষয় হল বহু কষ্টে দুই-একজন প্রার্থী  নিজের নম্বর জানতে পারলেও অন্য কারো নম্বর তাদের জানানো হয়নি 'তৃতীয় ব্যক্তির' তথ্য বলে কমিশন তা দিতে অস্বীকার করে। 

নিরুপায় হয়ে প্রার্থীরা ইনফরমেশন কমিশনের দ্বারস্থ হলে কমিশন সাফ জানিয়ে দেয় জনগণের ট্যাক্সে যে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় তার তথ্য তৃতীয় ব্যক্তির হতে পারে না, তা সকলের জানার অধিকার আছে এবং কলেজ সার্ভিস কমিশনকে রায়ের কপি হাতে পাওয়ার ২১ দিনের মধ্যে মেধা তালিকাভুক্ত সকল প্রার্থীর নম্বর প্রার্থীদের জানাতে হবে।

এই রায়ে প্রার্থীরা খুশি হলেও কলেজ সার্ভিসের পক্ষে যে বিপদের কারণ হয় তা বোঝা যায় সাম্প্রতিক  রায়ের কপি হাতে পাওয়ার  পর। রসায়ন, শিক্ষা বিজ্ঞান, বাংলা, ভূগোল বিষয়ের যেসমস্ত প্রার্থী সকলের নম্বর জানার রায় পেয়েছিলেন তাদেরকে তথ্য না দিয়ে কলেজ সার্ভিস কমিশন  কলকাতা হাইকোর্টে ইনফরমেশন কমিশনের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে কেস দায়ের করেছে! এমনকি সেই কেসের কপি পৌঁছে গিয়েছে কিছু প্রার্থীদের বাড়িতে।

এই সূত্রে জানিয়ে রাখা প্রয়োজন সাম্প্রতিক কলকাতা হাইকোর্টের মহামান্য  বিচারপতি মাননীয়া অমৃতা সিনহাও কলেজ সার্ভিস কমিশনকে বাংলা ও ভূগোল বিষয়ে মেধা তালিকাভুক্ত প্রার্থীদের করা কেসের প্রেক্ষিতে সকলের নম্বরসহ মেধা  তালিকা প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছিলেন। সিঙ্গেল বেঞ্চের এই রায়কেও কলেজ সার্ভিস কমিশন চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ডিভিশন বেঞ্চে যায়। পাশাপাশি, কলেজের সহকারী অধ্যাপক নিয়োগে গণিত বিষয়েও ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। সেখানে ইন্টারভিউ বোর্ডে থাকা অধ্যাপকদের বিরুদ্ধে স্বজন পোষণের অভিযোগ উঠছে। শুনানি পর্বে ইন্টারভিউ বোর্ডে থাকা একজন অধ্যাপক ১৭ জনকে চাকরি দেওয়ার কথা একরকম মেনেই নিয়েছেন। যদিও তিনি দাবি করেছেন, তাঁর কাছে কাজ করা ওই সমস্ত প্রার্থীরা নিজের দক্ষতাতেই চাকরি পেয়েছে। এখানেই প্রশ্ন উঠছে, ওই অধ্যাপকের কাছে কাজ করা প্রার্থীদেরই কি কেবল নিজেদের দক্ষতা আছে? অন্যদের নেই? জানা গেছে, ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের আর কোনও অধ্যাপকের কাছে গবেষণা করা মেধাবী পড়ুয়াদের মেধাতালিকায় জায়গা দেওয়া হয়নি।

২০২০ সালের শেষের দিকে সাঁওতালী বিষয়ে এক প্রার্থীকে কলেজ সার্ভিস কমিশন নিয়োগ পাওয়া বেশকিছু প্রার্থীর নম্বর জানাতে বাধ্য হয়েছিল ইনফরমেশন কমিশনের নির্দেশে। সেখানে দেখা গিয়েছিল একজন প্রার্থীর সঙ্গে আর একজন প্রার্থীর ইন্টারভিউ-এর নম্বরের আকাশ-পাতাল পার্থক্য।  ইনফরমেশন কমিশনের রায়  এবং কলকাতা হাইকোর্টের রায়েও যখন কলেজ সার্ভিস কমিশন সকলের নম্বর প্রকাশ করতে এতখানি অনীহা দেখাচ্ছে তখন বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। একটি  বিষয়ের প্রার্থীকে তথ্য দেওয়া হল, অন্য বিষয়গুলিকে 'তৃতীয় পক্ষের তথ্য' বলে তথ্য না দিতে চাওয়ার পিছনে আসল রহস্যটা কী! এক যাত্রায় পৃথক ফল কেন?- এধরনের নানা সন্দেহকে প্রবল করে তুলছে কলেজ সার্ভিস কমিশন ও সরকারের অবস্থান। আপার প্রাইমারি ও প্রাইমারির নিয়োগের নানা ঘটনাও স্মরণ করাচ্ছে।

close