সহকারী অধ্যাপক: পশ্চিমবঙ্গের কলেজগুলোতে রয়েছে প্রচুর শূন্যপদ। এই অবস্থায় দ্রুত নিয়োগের দাবি জানালেন মেধাতালিকা ভুক্ত চাকরি প্রার্থীরা। কাউন্সেলিং করে সহকারী অধ্যাপক পদে দ্রুত নিয়োগের দাবি জানালেন কলেজ সার্ভিস কমিশনের ২০২০ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী প্যানেলভুক্তরা। সোমবার প্রেস ক্লাবে এক সাংবাদিক বৈঠকে তাঁরা দাবি করেন, মেধা তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও তাঁরা চাকরি পাচ্ছেন না।
চাকরি প্রার্থীদের দাবি রাজ্যে সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত কলেজগুলিতে ৩০,০০০ শূন্যপদ আছে। যদিও তাদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না। এই অবস্থায় ২০২০ কলেজ সার্ভিস কমিশনের মেধাতালিকাভুক্ত প্রার্থীদের সমস্ত প্রশাসনিক জটিলতা কাটিয়ে দ্রুত নিয়োগের দাবিতে ১লা এপ্রিল, ২০২৪ কলকাতা প্রেস ক্লাবে মেধা তালিকাভুক্ত চাকরিপ্রার্থীরা সাংবাদিক সম্মেলন করেন।
চাকরি প্রার্থীরা বলছেন, ২০১৮ সাল থেকে এই রাজ্যে ইউজিসি নিয়ম মেনে সিবিসিএস পদ্ধতিতে পঠনপাঠন চলছে। ২০২০ থেকে নিউ এডুকেশন পলিসি অনুসারে চালু হয়েছে চার বছরের ডিগ্রী কোর্স। এমতাবস্থায় কলেজগুলির পঠনপাঠন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য বিপুল সংখ্যক স্থায়ী অধ্যপক নিয়োগ আবশ্যিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ বাস্তবের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বিপরীত। প্রয়োজনীয় শিক্ষকের অপ্রতুলতায় কলেজগুলোয় পঠনপাঠন চালানো যখন কার্যত অসম্ভব হয়ে ঠেকেছে, কমিশন প্রকাশিত একের পর এক মেধাতালিকায় অস্বাভাবিকভাবে শূণ্য পদের সংকোচন হয়েছে। বিভিন্ন বিষয়ের মেধাতালিকায় চোখ রাখলে বোঝা যাবে গতবারের প্রকাশিত মেধাতালিকাগুলির এক তৃতীয়াংশ নামও সেখানে নেই। অথচ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে সরকারের পক্ষ থেকে বারবার খবর করানো হয়েছিল হাজার হাজার অধ্যাপক নিয়োগের। প্রায় প্রতিটি বিষয়ে প্রতি বছর হাজার হাজার এপ্লিকেশন জমা পড়লেও তিন বছর বাদে ২০২৩ এ এসে যখন মেধাতালিকা প্রকাশিত হয়, তখন দেখা যায় সিট মাত্র কয়েকশো। অথচ বিপুল পরিমাণ এপ্লিকেশন ফি নিলেও ২০২০ সালে বিজ্ঞপ্তির সময় শূন্য পদের সংখ্যা জানানো হয়নি।
মেধাতালিকা প্রকাশের মাস চারেক পর রিকাউন্সেলিং সংক্রান্ত কোনোরকম বিজ্ঞপ্তি না দেখে আমরা বিভিন্ন বিষয় থেকে জানুয়ারি মাস নাগাদ যখন CSC তে যাই, আমাদের এক একজনকে একেক রকম কথা বলে বিভ্রান্ত করা হয়। আমাদের মধ্যেই একজনকে বলা হয়েছিল ফার্স্ট কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে যাঁরা নিয়োগ পেয়েছিলেন, তারা রিজাইন না করলে আমাদের মত শেষের দিকের চাকরীপ্রার্থীদের চাকরি পাওয়ার কোনো সম্ভবনা নেই। কিন্তু আমাদের যাদের সেই কাউন্সেলিংয়ে উপস্থিত থাকার অভিজ্ঞতা আছে তাদের স্পষ্টতই মনে আছে যে আমাদের বলা হয়েছিল আমাদের মেধাতালিকা প্রকাশের আগে পর্যন্ত কলেজে যদি কোনো শূন্য পদ তৈরী হয়ে থাকে, আমরা সেই পদে নিয়োগ পাওয়ার যোগ্য। একটা সময় পর কমিশনে গেলে আমাদের বলা হতে থাকে কলেজগুলি রিক্যুইজিশন না পাঠানোর কারনে তাদের 'সদিচ্ছা' থাকা সত্ত্বেও আমাদের রিকাউন্সেলিং করানো যাচ্ছে না। সমস্যার সমাধান স্বরূপ তাঁরা আমাদের কলেজে কলেজে যোগাযোগ করে সেই সকল কলেজকে দিয়ে রিক্যুইজিশন পাঠানোর নিদান দেন। সারা বাংলাঅধ্যক্ষপরিষদের-এর ওয়েবসাইট থেকে সারা পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ৪৫০ টি কলেজের প্রিন্সিপালদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে থাকি। যে কলেজগুলিতে শূন্য পদ রয়েছে বলে খবর রয়েছে আমাদের কাছে, সেই সমস্ত কলেজগুলিতে গিয়ে সরাসরি প্রিন্সিপাল, টিচার-ইন-চার্জদের সাথে কথা বলতে গিয়ে আমরা এই অসংখ্য শূন্যপদ থাকা সত্ত্বেও কলেজগুলি কেন রিক্যুইজিশন পাঠাচ্ছে না, বা পাঠাতে পারছে না সে বিষয়ে অদ্ভুত সমস্ত ন্যারেটিভ শুনতে পাই। কোনো কোনো কলেজ সপাট জানিয়ে দেয় তাদের শূণ্যপদগুলিতে ট্রান্সফারের মাধ্যমে অধ্যাপক নিয়োগ করার সব বন্দোবস্ত করা আছে, কাজেই উক্ত পদগুলিতে মেধাতালিকা থেকে 'ফ্রেশ ক্যান্ডিডেট' নিয়োগ করার প্রশ্নই ওঠে না! প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ইংরেজি সহ বহু বিষয়ের মেধাতালিকায় এবার ইন-সার্ভিস ক্যান্ডিডিটদের আধিক্য দেখা গেছে। সেক্ষেত্রে প্রায় দুবছর সময় ধরে চলা ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে অধ্যাপক নিয়োগ কার্যত ট্রান্সফার প্রক্রিয়ায় পর্যবসিত হয়েছিল হাজার হাজার উচ্চ শিক্ষিত বেকারের অধ্যাপক হওয়ার স্বপ্ন চুরমার করে দিয়ে। আজ আবারও সেই ট্রান্সফারের কারনেই মেধাতালিকাভুক্ত হয়েও, কলেজে কলেজে যথেষ্ট শূণ্যপদ থাকা সত্ত্বেও আমরা নিয়োগ থেকে বঞ্চিত। কিছু কিছু কলেজের অভিযোগ আরও মারাত্মক। উচ্চশিক্ষা দপ্তরের নির্দেশে জেনারেল এবং মিউচুয়াল ট্রান্সফার করানোর সময় কলেজগুলি রিজার্ভেশন রোস্টার ভায়োলেট করতে একপ্রকার 'বাধ্য' হয়। ফলস্বরূপ কোনো সংরক্ষিত পদে হয় UR ক্যান্ডিডেট, নয় এক ক্যাটেগরির জন্য সংরক্ষিত পদে অন্য ক্যাটেগরির ক্যান্ডিডেট জয়েন করেন। বিষয়টি BCW (Backward Class Welfare) অফিসের নজরে আসতেই তারা সেই কলেজগুলির যাবতীয় ফাইল আঁটকে রেখে নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করে দেন। অর্থাৎ, মোটের ওপর সমস্যা গিয়ে দাঁড়াল সরকারেরই দুটো দপ্তরের (উচ্চশিক্ষা ও অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ) মধ্যে কো-অর্ডিনেশনের অভাব এবং যার ফল ভুগতে হচ্ছে আমাদের মত যোগ্যতার সমস্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া মেধাতালিকাভুক্ত চাকরিপ্রার্থীদের। আমাদের বিভিন্ন দপ্তর থেকে এও বলা হয়েছে যে সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপ ব্যতীত এই "bureaucratic deadlock" কাটানো কার্যত অসম্ভব!
পরিস্থিতি এরকম চলতে থাকলে আমরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি আগামী CSC তে নিয়োগ ভয়াবহভাবে আরও কমবে। কিন্তু এর প্রতিকারের কোনো দিশা আমাদের সামনে নেই। রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান সহ, শিক্ষামন্ত্রী ও বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা আধিকারিকদের কাছে মেইল এর মাধ্যমে বারবার এই বার্তা পৌঁছে দেওয়ার পরেও তাদের থেকে কোনরকম আশাব্যঞ্জক বাক্য আমরা আজও শুনতে পাইনি। যে অন্ধকার গোলকধাঁধার পড়ে ঘুরছি আমরা এই মুহুর্তে, আগামী কয়েক বছরে এ রাজ্যের NET/SET/ JRF পাশ করা, MPhil, PhD ডিগ্রীধারী উজ্জ্বল মেধাবী ছাত্রছাত্রীর এটাই ভবিষ্যৎ হতে চলেছে।
এই প্রসঙ্গে সম্মেলনে শিক্ষাবিদ মিরাতুন নাহার বলেন, "নিয়োগ আটকে রাখা মধ্যেও দুর্নীতি আছে। এর দায় মুখ্যমন্ত্রীর, শিক্ষামন্ত্রীর। ওনারা যদি প্রকৃতই জনগণের প্রতিনিধি হতেন তাহলে এমনটা হতে পারত না। এই উচ্চশিক্ষিত ছেলেমেয়েদের সমস্যায় শিক্ষা দফতর কিভাবে হাত গুটিয়ে বসে আছে সেটাই ভেবে পাচ্ছি না। এর বিরুদ্ধে আমার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।"