Kode Iklan atau kode lainnya

SSC SCAM: লকডাউনকে হাতিয়ার ছড়ানো হয়েছিল অবৈধ নিয়োগের জাল, জালিয়াতি নিয়োগের চিঠিতেও

 

নিউজ ডেস্ক: স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে একের পর এক তথ্য সামনে আসছে। সাদা খাতা জমা দেওয়া থেকে কাউন্সেলিংয়ের সময় স্কুল বদল! সবকিছুতেই দুর্নীতির ছবি সামনে আসছে। এবার নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে আরও এক নজিরবিহীন তথ্য উঠে এল গণশক্তির প্রতিবেদনে।  সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটি তুলে ধরা হল- 

চাকরির নিয়োগপত্র হাতে দিয়েও জালিয়াতি করেছে স্কুল সার্ভিস কমিশন। নিয়োগপত্র হাতে পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে যোগ দিতে হবে বিদ্যালয়ে। কিন্তু কোথাও মানা হয়নি নিয়োগের সেই নীতিকেও। সাত-আট মাস এমনকি বছর পার করেও স্কুলে চাকরিতে যোগ দিতে এসেছিলেন গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি পদের প্রার্থীরা। বেআইনি পথে কীভাবে এই নিয়োগ করা সম্ভব, জানতে চেয়ে পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি কল্যাণময় গাঙ্গুলিকে চিঠি পর্যন্ত দিয়েছিলেন জেলাস্তরের শিক্ষা দপ্তরের আধিকারিকরা। অবধারিতভাবেই নিয়োগ জালিয়াতি ঠেকাতে কোনও উত্তরই আসেনি। মৌখিকভাবে জানতে চেয়ে উত্তর না পেয়ে, লিখিতভাবেও সরকারকে সাবধান করেছিলেন একাংশের আধিকারিক।

আদালতের রায়ের আগেই সরকারের দুর্নীতি নিয়ে সরব হয়েছিলেন শিক্ষা দপ্তরের একাংশ আধিকারিক। অনলাইন মিটিং-এ বিকাশ ভবনের শীর্ষকর্তাদের কাছে প্রশ্ন তুলেছিলেন আধিকারিকরা। জানতে চেয়েছিলেন, লকডাউন চলছে। স্কুল বন্ধ। কাজের দিন না থাকায় কীভাবে নিয়োগপত্র হাতে নিয়ে আসা চাকরিপ্রার্থীদের স্কুলে নিয়োগ হবে? রাজ্যের শিক্ষা দপ্তরের প্রধান সচিব সহ বিকাশ ভবনের একাধিক শীর্ষ আমলার সামনে অনলাইন বৈঠকে প্রশ্ন তুলেও মেলেনি কোনও সুরাহা। বরং প্রশ্ন তুলতে থাকা আধিকারিকদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, স্কুল বন্ধ থাকলেও নিয়োগপত্র নিয়ে যাঁরা হাজির হবেন তাঁদের কাজে যোগদান করিয়ে দিতেই হবে। 

অনলাইন বৈঠকে আধিকারিকদের মধ্যে মৌখিক কথোপকথন চলে। তাই অনলাইন বৈঠকের পরেই সরকারের নিয়োগ জালিয়াতি নিয়ে লিখিতভাবে বক্তব্য মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি কল্যাণময় গাঙ্গুলির কাছে পাঠিয়েছিলেন দক্ষিণবঙ্গের এক জেলার স্কুলশিক্ষা দপ্তরের আধিকারিক। বিকাশ ভবন সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ‌আধিকারিক বিদ্যালয়ের করণিক ও গ্রুপ ডি পদে নিয়োগের জন্য আসা চাকরিপ্রার্থীদের নাম, কোন স্কুলে যোগ দিতে এসেছেন সেই তথ্য সহ নিয়োগপত্রের মেমো নম্বর উল্লেখ করে চিঠি দিয়েছিলেন বোর্ডের সভাপতিকে। চিঠিতে জানানো হয়েছিল, ‘‘বোর্ডের কাছ থেকে নিয়োগপত্র নিয়ে আমাদের জেলার বিদ্যালয়ে করণিক ও গ্রপ ডি পদে বেশ কয়েকজন কাজে যোগ দিতে এসেছে। যাঁরা কাজে যোগ দিতে এসেছেন, তাঁদের হাতে বোর্ডের তরফে দেওয়া নিয়োগপত্র আছে। কিন্তু জেলা আধিকারিকের দপ্তরে এখনও পর্যন্ত কোনও নিয়োগের নির্দেশিকা এসে পৌঁছায়নি।’’ কল্যাণময় গাঙ্গুলিকে লেখা সরকারি চিঠিতে এরপরই তাৎপর্যপূর্ণভাবে জানানো হয়েছিল, ‘‘নিয়োগপত্র হাতে নিয়ে আসা চাকরিপ্রার্থীদের ‘অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার’এ স্পষ্ট লেখা আছে, ১৫ দিনের মধ্যে কাজে যোগ দিতে হবে। কিন্তু তারা এসেছে বছর পার করে।’’

চিঠিতে বোর্ড সভাপতির কাছে লেখা হয়েছিল, নিয়োগপ্রার্থীদের নিয়োগের সময়সীমা অবিলম্বে বাড়ানোর নির্দেশিকা পাঠানো দরকার। এ ব্যাপারে বোর্ডের পরিকল্পনা কী তা জানানোর অনুরোধও ছিল সরকারি চিঠিতে। কিন্তু সেই চিঠির কোনও জবাব দেয়নি মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি কল্যাণময় গাঙ্গুলি। 

প্যানেলের সময়সীমা পার করে নিয়োগ দুর্নীতিতেই জড়ানো নয়, চাকরি হাতে দিয়ে নিয়োগপত্রেও মানা হয়নি আইনের দায়বদ্ধতা। আসলে শুরু থেকেই গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি নিয়োগ করা হয়েছে দুর্নীতিকেই নীতি হিসাবে গ্রহণ করে। ফলে টাকা নিয়ে চাকরি দেওয়ার মতোই নিয়োগপত্র হাতে নিয়ে বছরের যে কোনও সময় স্কুলে গিয়ে কাজে যোগ দিয়ে পার পেয়ে গিয়েছেন চাকরিপ্রার্থীরা। 

লকডাউনে স্তব্ধ হয়ে যাওয়া জনজীবনকেই বেছে নেওয়া হয়েছিল অবৈধ নিয়োগের জালকে গুটিয়ে আনার কাজে। বিকাশ ভবনের শীর্ষ আমলা থেকে শুরু করে তৃণমূল কংগ্রেসের মন্ত্রী, নেতারা উঠেপড়ে লেগেছিলেন লকডাউনের মধ্যেই স্কুল সার্ভিস কমিশনের যাবতীয় অন্যায়, অবৈধ নিয়োগকে সেরা ফেলার জন্য। তাড়াহুড়ো এতটাই ছিল যে, বিকাশ ভবন থেকে রাত ১০টায় জেলার আধিকারিকদের সঙ্গে ‘গুগুল মিট’-এ অনলাইন বৈঠক করতেন শিক্ষা দপ্তরের প্রধান সচিব মণীশ জৈন। 

২৪ মার্চ রাত থেকে গোটা দেশে লকডাউন হওয়ার খবর সরকারের কাছে ছিলই। তাই গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি পদে সব নিয়োগপত্র ১৭ মার্চ, ১৯ মার্চ ও ২০ মার্চের মধ্যে তুলে দেওয়া হয়েছিল চাকরিপ্রার্থীদের কাছে। দুর্নীতির এই গোটা প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বিকাশ ভবনের শীর্ষ আধিকারিকরা,’’ জানিয়েছেন শিক্ষা দপ্তরের এক আধিকারিক।

২০২০ সালের ২৪ মার্চ থেকে গোটা দেশে শুরু হয়ে যায় লকডাউন। লকডাউনের মধ্যেই মে, জুন ও জুলাই মাসজুড়ে স্কুলগুলিতে আসতে শুরু করে অবৈধ নিয়োগপ্রার্থীরা। ‘‘বিদ্যালয় বন্ধ লকডাউনে। স্কুল খোলার কোনও নির্দেশিকা নেই। এই পরিস্থিতিকে কীভাবে জয়েনিং করাবো, জানতে চেয়েও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি,’’ বলেছেন এক আধিকারিক।

 ‘‘আমাদের কাছে খালি খাতার মজাই আলাদা!’’ এসএসসি’র নিয়োগ দুর্নীতির ভাইরাল হওয়া সেই অডিও উঠেছিল হাইকোর্টের এজলাসেও। সেই অডিওতেই আছে, ‘‘ওয়েটিং-এ আছো। দু’লাখ কম দিবে। স্কুল খুলবে জয়েন করবে। না হলে, মিড ডে মিলের দিন জয়েন করিয়ে দিব। পশ্চিম মেদনাপুরের ডিআই সেট আছে না! ময়নার ডিআই না? ওই জন্য কোনও চাপ নাই।’’ 

ডিআই থেকে বিকাশ ভবনজুড়ে গত তিন বছর ধরে বিস্তৃত ছিল দুর্নীতির সেটিং।

close