নিউজ ডেস্ক: এই মুহূর্তে গোটা রাজ্যে আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। ১৭ নম্বর এজলাস যেন বঞ্চিত চাকরি প্রার্থীদের ভরসার স্থল। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। রাজ্যের বিচারব্যবস্থার ইতিহাসে সাম্প্রতিককালে যেসকল আলোড়ন ফেলে দেওয়া বা সাড়া জাগানো মন্তব্য এসেছে, তার নব্বই শতাংশ-ই এই বিচারপতি গাঙ্গুলির ১৭ নম্বর এজলাস থেকে। আসুন একবার দেখা যাক, বিচারপতি অভিজিৎ গাঙ্গুলির উল্লেখযোগ্য ছয় মন্তব্য।
প্রসঙ্গ এক, ১৭ নম্বর এজলাস বয়কট করেছিলেন আইনজীবীদের একাংশ। সেই বিষয়ে গর্জে উঠে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় মন্তব্য করেছিলেন, "আপনার হয়তো রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা থাকতে পারে। কিন্তু দুর্নীতি দেখলে আদালত চুপ থাকবে না। যে দুর্নীতি করবে, যে রাজনৈতিক দলের হোক, ছেড়ে দেওয়া হবে না। আমার মাথায় বন্দুক ধরতে পারেন। মরতে রাজি। কিন্তু দুর্নীতি দেখে চুপ থাকবে না আদালত। যারা দুর্নীতি করছে তাদের সঙ্গে শুধু শত্রুতাই থাকতে পারে।"
প্রসঙ্গ দুই, ২৫ বছর ধরে বেতন পাননি বাংলার শিক্ষিকা। দীর্ঘ ৩৬ বছরের লড়াইয়ের পর শেষে আশার আলো দেখতে পান। ৭৬ বছরের বৃদ্ধা শিক্ষিকাকে সব বেতন এরিয়ারের সঙ্গে মিটিয়ে দিতে নির্দেশ দেন বিচারপতি অভিজিৎ গাঙ্গুলি। ৩৬ বছর ধরে চলা মামলার সুরাহা করেন। রায় ঘোষণা হতেই এজলাসে কেঁদে ফেলেন বৃদ্ধা। আর বিচারপতি অভিজিৎ গাঙ্গুলি বলেন, "আমার ঘরে আসা বৃদ্ধ নাগরিককে খালি হাতে ফেরাতে পারি না।"
প্রসঙ্গ তিন, মন্ত্রী পরেশ অধিকারীর মেয়ে অঙ্কিতা অধিকারীর এসএসসি নিয়োগে দুর্নীতির প্রমাণ মিলতেই মন্ত্রীকন্যাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত ও বেতন ফেরতের নির্দেশ দেন বিচারপতি গাঙ্গুলি। ২০২০ সাল থেকে যাবতীয় বেতন ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেন। পাশাপাশি, মন্ত্রীকন্যাকে স্কুলে ঢুকতেও বারণ করে দেন। তাঁর ফাঁকা পোস্টে ন্যায্য প্রার্থী মামলাকারী ববিতা সরকারকে অগ্রাধিকার দেওয়ার নির্দেশ দেন।
প্রসঙ্গ চার, রাজ্যের একাধিক মামলায় সিবিআই তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে চরম হতাশা ব্যক্ত করে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্য়ায়কে বলতে শোনা যায়, "ডজন খানেক সিবিআই তদন্ত শেষে নোবেল পুরস্কার হবে! মনে হচ্ছে সিবিআই-এর থেকে সিট ভাল। টানেলের শেষে কোনও আলো দেখতে পাচ্ছি না। নভেম্বর মাসে প্রথম সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলাম। তারপর কী হয়েছে? কিছুই নয়।"
প্রসঙ্গ পাঁচ, এসএসসি মামলায় মন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জির হয়ে সওয়াল করছিলেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্য়ায়। বলেন, "পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে জেলে ঢোকাব সেটা যদি আদালতের মাইন্ডসেট হয়ে থাকে, তবে আপত্তি নেই। কিন্তু কীসের ভিত্তিতে?" যা শুনে আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের পাল্টা প্রশংসায় মুখর হন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্য়ায়। বলেন, "এটা দেখে ভাল লাগছে একজন রাজনীতিবিদ যে কোনও সময়ে ভাল আইনজীবী হতে পারে।" এমনকি আলাপচারিতায় অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এও বলেন, "আমি তো আপনার ভক্ত। আপনার মতো লোক ক'জন আছে?"
প্রসঙ্গ ছয়, বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্য়ায়ের এই তালিকায় নবতম সংযোজন বুধবার এজলাসে আইনজীবীদের উদ্দেশে 'হাইকোর্টের জ্য়াঠামশাই' মন্তব্য। তিনি বলেন, "কোনও এক জ্যাঠামশাই বলে বেড়াচ্ছেন, অভিজিৎবাবু এটা করেননি। ওটা করেননি। এটা ঠিক নয়। ওই জ্যাঠামশাই কে আমি জানি। এক-দুমাসের মধ্যেই তিনি টের পাবেন। তাঁর বিরুদ্ধে আমি তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করছি। তিনি বলে বেড়াচ্ছেন, আমি আইনের এ বি সি ডি জানি না!"