এই দেশে কিচ্ছু বদলাবে না, আমি টিভিতে নাম চাই না, শুধু চাই সঠিক ব্যক্তি চাকরি পান: অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়

গত আট মাস শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগে মোট দশটি মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। যদিও এখন য

নিউজ ডেস্ক: গত আট মাস শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগে মোট দশটি মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। যদিও এখন যেন তার গোলাতেও উল্টো সুর। ভরা এজলাসে সিবিআইয়ের তদন্তের গতিপ্রকৃতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে শোনালেন একরাশ হতাশার কথা। আক্ষেপের সুরে বললেন, ‘সিবিআই দিয়ে কি ভুল করলাম! সিটকে তদন্তভার দিলেই ভালো হতো।’ মঙ্গলবার প্রথমার্ধে মধ্যাহ্নভোজের বিরতি পর্বের কয়েক মিনিট আগে বিচারপতির এহেন মন্তব্য।

জরুরি পণ্য পরিষেবা সংক্রান্ত একটি মামলার শুনানির জন্য এজলাসে তখন হাজির আইনজীবী তথা তৃণমূল কংগ্রেসে সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সামনেই সিবিআই তদন্তের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। কল্যাণবাবু পাল্টা বলেন, ‘সিবিআই দিয়ে লাভ কী? ওরা মিডিয়ার সামনে চার-পাঁচদিন বা খুব বেশি হলে ১০ দিন হইহই করবে।’ সুর মেলান বিচারপতিও। হতাশ গলায় জানান, ‘গত এক বছরে ডজনখানেক মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ হয়েছে। কিন্তু শেষে কি সব নোবেল পুরস্কার হবে! গতকাল সিবিআইকে তদন্তভার দেওয়ার সময় ভাবছিলাম, ভুল করলাম না তো? সিটকে দিলেই বোধহয় ভালো হতো। একটা সুড়ঙ্গের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলাম। শেষে ভেবেছিলাম আলো দেখা যাবে। কিন্তু কিছুই হল না। আমি ক্লান্ত। গত বছর নভেম্বর মাসে আমি প্রথম সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলাম। কোনও তথ্যই তারা উদ্ধার করতে পারেনি। সত্যই আমি খুব খুব ক্লান্ত।’

কল্যাণবাবুও তখন বলেন, ‘আমিও আগে অনেক এনার্জেটিক ছিলাম। এসব দেখতে দেখতে এখন ক্রমশ হতাশ হয়ে পড়ছি।’ এরপর প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। বলেন, ‘আমি হয়তো পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে কিছু মন্তব্য করেছি। কিন্তু বিশ্বাস করুন পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের উপর আমার ব্যক্তিগত কোনও রাগ বা ক্ষোভ নেই। উনি একজন বিজ্ঞ মানুষ।’ এখানেই থামেননি বিচারপতি। তিনি আরও বলেন, ‘এতগুলো সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিলাম, মুখ্যমন্ত্রীর কাছে কোনও বার্তা পৌঁছেছে কি না জানি না। রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রে এখন খুব খারাপ সময় যাচ্ছে। কারও কাছেই এটা আদৌ সুখকর পরিস্থিতি নয়।’

এরপর সিবিআইয়ের যোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে বিচারপতি বলেন, ‘সিবিআই এই কেসের কিনারা করতে পারবে কি না, সে ব্যাপারে আমার সন্দেহ রয়েছে। হতাশ বলব না, তবে সত্যিই আমি ক্লান্ত।’ 

কল্যাণবাবুর গলাতেও তখন প্রশ্ন, ‘রিজওয়ানুর, গড়বেতা বা তাপসী মালিকের মামলায় কী করেছে সিবিআই?’ বিচারপতি ফের বলে ওঠেন, ‘সিবিআই তদন্তভার নেওয়ার পর গত সাত মাসে কিছুই হল না? রাজ্যের একজন সাধারণ মানুষ কী ভাববেন? এই দেশে কিচ্ছু বদলাবে না। আমি সত্যিই বেশ উদ্বিগ্ন। কিন্তু কাকেই বা তদন্তভার দেব।’ সেই কথার সূত্র ধরেই ভিখারি পাসোয়ানের মামলার প্রসঙ্গ টানেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেন, ‘ভিখারি পাসোয়ানের কেস দেখুন। একাধিক সাক্ষী তো মারাই গিয়েছে।’ 

এবার চরম হতাশা বিচারপতির গলায়, ‘আমার কাছে যে তথ্য এসেছে, তার ভিত্তিতেই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি। কিন্তু আগামী দিনে এই ধরনের ঘটনা এলে কী করব, জানি না। আমি সংবাদপত্র, টিভিতে ছবি বা নাম চাই না। শুধু চাই, সঠিক ব্যক্তি চাকরি পান। দেখি আগামী কাল সিবিআই কী রিপোর্ট দেয়!’

LihatTutupKomentar
close