নিউজ ডেস্ক: স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় নজিরবিহীন দুর্নীতি সামনে এল। মেয়াদ শেষের পরেও ৩৮১ জনকে সুপারিশপত্র! শান্তিপ্রসাদ সিন্হা ভুয়ো সুপারিশপত্র কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়কে দিতেন। সেই সুপারিশপত্রের ভিত্তিতে নিয়োগপত্র তৈরি করাতেন কল্যাণময়। রঞ্জিত বাগ কমিটির রিপোর্টে উল্লেখ।
৩৮১ জনকে ভুয়ো নিয়োগ করেছে স্কুল সার্ভিস কমিশন! নিয়োগ দুর্নীতিতে ৮ কর্তা অভিযুক্ত। এমনই রিপোর্ট পেশ হল কলকাতা হাইকোর্টে। নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে হাই কোর্ট রায় দেবে আগামী বুধবার।
এদিন এসএসসি নিয়োগ সংক্রান্ত মামলার শুনানি হয় বিচারপতি সুব্রত তালুকদার এবং বিচারপতি আনন্দ কুমার মুখোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে। শুনানিতেই বিচারপতি আরকে বাগের কমিটি গ্রুপ সি নিয়োগে দুর্নীতি নিয়ে রিপোর্ট জমা দেয়।
বাগ কমিটির আইনজীবী অরুণাভ বন্দ্যোপাধ্যায় আদালতকে জানান, ৩৮১ জনকে ভুয়ো নিয়োগ করা হয়েছে। তার মধ্যে ২২২ জন পরীক্ষাই দেননি। বাকিরা পাশ করেনি। প্যানেলের মেয়াদ শেষ হয় ২০১৯ সালের মে মাসে। ভুয়ো নিয়োগ করা হয়েছে সল্টলেকের আনন্দলোক হাসপাতালের কাছে নতুন ভবন থেকে।
মেয়াদ শেষের পরও নভেম্বর মাস অবধি বেআইনি ভাবে নিয়োগ করা হয়েছে। উপদেষ্টা কমিটির আহ্বায়ক শান্তিপ্রসাদ সিংহের সুপারিশ মতো ভুয়ো নিয়োগপত্র তৈরি করেন পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়। মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরও ২০১৯ সালের ১ নভেম্বর তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় পেন্ডিং রিক্রুটমেন্ট শেষ করতে বলেন। তাঁর নির্দেশেই পাঁচ সদস্যের উপদেষ্টা কমিটি গঠিত হয়।
এই বিষয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী-শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক কিংকর অধিকারী বলেন, “এস এস সি-তে ৩৮১ জনকে ভুয়ো নিয়োগ করা হয়েছে। তার মধ্যে ২২২ জন পরীক্ষাই দেননি। বাকিরা পাশ করেনি। নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতির রিপোর্ট প্রকাশ করল বাগ কমিটি। রিপোর্টে প্রকাশ সর্বোচ্চ স্তরের আধিকারিক এবং প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীও জড়িত। শিক্ষাক্ষেত্রে এই চূড়ান্ত দুর্নীতি আমাদের চরম লজ্জার। কোনভাবেই তা বরদাস্ত করা যায় না। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং যোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের অবিলম্বে নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে।”
মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতি (STEA)-র দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা সম্পাদক অনিমেষ হালদার বলেন, "যখন লক্ষ লক্ষ শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী শূন্যপদে রাজ্যের বিদ্যালয়গুলি রক্তাল্পতায় ভুগছে তখন SSC গ্রুপ-সি দুর্নীতিতে "সঞ্জিত বাগ কমিটি"র রিপোর্টে যেভাবে রক্ষকদের ভক্ষকের ভূমিকায় দেখা গেল তাকে ধিক্কার জানানোর কোনো ভাষা নেই। অবিলম্বে অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক। বের করা হোক আধিকারিকদের উপর কার নির্দেশ বা হাত ছিল। যে সমস্ত যোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের বঞ্চিত করা হয়েছে তাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে অবিলম্বে নিয়োগের ব্যবস্থা করুক রাজ্য।"
জড়িতদের নাম প্রকাশ করল বাগ কমিটি:
১) সমরজিৎ আচার্য (স্কুল সার্ভিস কমিশনের প্রোগ্রামিং অফিসার)
২) কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায় (মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি)
৩) সৌমিত্র সরকার (স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান)
৪) অশোককুমার সাহা (স্কুল সার্ভিস কমিশনের সচিব)
৫) সুবীরেশ ভট্টাচার্য (স্কুল সার্ভিস কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান)
৬) শর্মিলা মিত্র, শুভজিৎ চট্টোপাধ্যায়, শেখ সিরাজউদ্দিন, মহুয়া বিশ্বাস, চৈতালি ভট্টাচার্য (কমিশনের আঞ্চলিক চেয়ারম্যান)
৭) রাজেশ লায়েক (বোর্ডের টেকনিক্যাল অফিসার)
এই ভুয়ো নিয়োগের গণ্ডগোলে তৎকালীন এসএসসি কর্তারা কোনও না কোনও ভাবে সবাই জড়িত বলে দাবি করল বাগ কমিটি।
এফআইআর করার সুপারিশ করা হয়েছে নিম্নলিখিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে:
১) সৌমিত্র সরকার
২) অশোক কুমার সাহা
৩) কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়
৪) শান্তিপ্রসাদ সিনহা
৫) সমরজিৎ আচার্য
বিভাগীয় তদন্তের সুপারিশ
রিপোর্টে বিভাগীয় তদন্তের সুপারিশ করা হয়েছে নিম্নলিখিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে:
সুবীরেশ ভট্টাচার্য
চৈতালি ভট্টাচার্য
শর্মিলা মিত্র
মহুয়া বিশ্বাস
শুভজিৎ চট্টোপাধ্যায়
শেখ সিরাজ উদ্দিন
এই কমিটির রিপোর্ট দেখেই বোঝা যাচ্ছে বিরাট বড় দুর্নীতি হয়েছে এই নিয়োগে। আর উপর মহলের নির্দেশ ছাড়া এটা সম্ভব নয়, শুনানিতে বললেন মামলাকারী আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য।