নিউজ ডেস্ক: স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় নজিরবিহীন দুর্নীতি সামনে এসেছে। মেয়াদ শেষের পরেও ৩৮১ জনকে সুপারিশপত্র! শান্তিপ্রসাদ সিন্হা ভুয়ো সুপারিশপত্র কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়কে দিতেন। সেই সুপারিশপত্রের ভিত্তিতে নিয়োগপত্র তৈরি করাতেন কল্যাণময়। রঞ্জিত বাগ কমিটির রিপোর্টে উল্লেখ। যে সময়ে এই নিয়োগ কেলেঙ্কারি ঘটেছিল তখন রাজ্যের শিক্ষা মন্ত্রী ছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। যদিও তিনি তাঁর দায় ঝেড়ে ফেলতে চাইছেন।
এনিয়ে রাজ্য সরকারকে একাহত সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী (Sujan Chakraborty)। "আমাদের রাজ্যে শিক্ষার সর্বনাশ করছে এই সরকার", এমনই মন্তব্য করেন তিনি।
সুজন চক্রবর্তী বলেন, "এইসব দেখে দেখে রাজ্যের মানুষ ক্লান্ত হয়ে গেল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ্যমন্ত্রিত্বের এই ১০-১১ বছরে নীতিহীনতা-দুর্নীতি চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। SSC, PSC- প্রতিটি ক্ষেত্রে ভয়ঙ্কর দুর্নীতির কথা সবাই জানেন। বিচারপতি বাগের কমিটি আজ রিপোর্ট পেশ করেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, সুপারিশ করছে এসএসসি, অথচ এসএসসি-রই (SSC) প্যানেলটা মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। এ ভাবা যায়! তার মধ্যে ২২২ জন এমন যাঁদের লিস্টে কোনও নাম নেই। কোথাও কিছু নেই, তাহলে এই ২২২ জন ভূতের মতো এল কোথা থেকে? শুধু টাকা। কত কোটি টাকা ? প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে দুর্নীতি। লেখাপড়া করা ছেলেমেয়েগুলো পাস করেছে। তারা চাকরি করবে বলে বাবা-মা স্বপ্ন দেখছেন। তারা কোনও প্রতিবাদ করতে পারবে না। বিক্ষোভ করলে পুলিশ পেটাবে। হাজতে নিয়ে যাবে। কী হচ্ছে এসব ? আর শিক্ষামন্ত্রী যে কমিটি গড়লেন সেটাই বেআইনি। বোঝা গেল, কমিটিটা টাকা জোগাড় করার জন্য করা হয়েছে। টাকার বিনিময়ে নিয়োগ হবে, আর লেখাপড়া করা ছেলেমেয়েগুলো রোজ আক্রান্ত হবে, মার খাবে- এ কখনো চলতে পারে ? তারা কষ্ট করে রাস্তায় পড়ে থাকবে, আর বিকাশ ভবনে সবাই শান্তিতে থাকবে ? কারা কারা ছিলেন ? তাঁদের বেআইনি সম্পত্তি কত হয়েছে ? তার ভাগ কে কে পেয়েছেন ? এগুলো টেনে বের করতে হবে। আমাদের রাজ্যে শিক্ষার সর্বনাশ করছে এই সরকার এবং তাদের ব্যবস্থা এটা আরও একবার স্পষ্ট। বাগ কমিটির রিপোর্টের পর শিক্ষামন্ত্রীর যদি ন্যূনতম বোধ থাকে পদত্যাগ করুন।"
দুর্নীতি নিয়ে রাজ্যের প্রাক্তন পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতারের দাবি তুললেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে এসএসসি দুর্নীতি নিয়ে তাঁর আক্রমণ, “এই এসপি সিনহা কমিটি পার্থ চট্টোপাধ্যায় তৈরি করেছে। পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করলেই পিসি-ভাইপোর নাম বলবেন। লক্ষ লক্ষ শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতীর চোখের জল ব্যর্থ হবে না।”
শুভেন্দু বলেন, “সারা বাংলা জুড়ে ভাইপোর এজেন্টরা মেধাসম্পন্ন, এমএসসি পাশ, এমএ পাশ, বিএড পাশ শিক্ষিত বেকারদের বঞ্চিত করে টাকার বিনিময়ে চাকরি দিয়েছে। এই জাহাজ বাড়ির মালিকও (শেখ সুফিয়ান) চাকরি বিক্রি করেছে। যেখানেই যাবেন দুর্গন্ধ বেরোবে। আমরা সব জানি। শুধু নিরপেক্ষ এজেন্সি তদন্ত করুক। কী ভাবে লাইন দিয়ে, তথ্য প্রমাণ দিয়ে সামনে আসবে এই পার্টিটা চোরের পার্টি (তৃণমূল কংগ্রেস)।”
প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীকে এই নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “ওটা নিয়ে আমি কোনও কথা বলছি না। কারণ আমি তো ওই দফতরের মন্ত্রী নই। যে দফতরের মন্ত্রী সে উত্তর দেবে”। পার্থবাবুকে বলা হয়, যে হেতু ওই সময়ে আপনি শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন, তাই আপনার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইছি। জবাবে বর্তমান শিল্প মন্ত্রী বলেন, “তাতে কী হয়েছে? পাঠান মোগলের টাইমেও তো অনেক ঘটনা ঘটেছে”।
একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, “আমি বাগ কমিটির রিপোর্ট দেখেছি। তবে সম্পূর্ণটা দেখিনি, যখন দেখব তখন বলব। তা ছাড়া আমি এখন শিক্ষা দফতরে নেই, শিক্ষা দফতর কী ভাবে জিনিসটাকে দেখছে, না জেনে দুম করে বলাটা অন্যায় হবে”।
বাগ কমিটির রিপোর্টে কাঠগড়ায় তোলা হয়েছে মোট ১১ জন এসএসসি কর্তাকে। তাঁরা কারা? এসএসসির প্রোগ্রামিং অফিসার সমরজিৎ আচার্য, চেয়ারম্যান সৌমিত্র সরকার, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণময় বন্দ্যোপাধ্যায়, স্কুল সার্ভিস কমিশনের সচিব অশোক কুমার সাহা, এসএসসির প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচর্য। এছাড়াও বাগ কমিটির তালিকায় অভিযুক্ত করা হয়েছে কমিশনের আঞ্চলিক চেয়ারম্যান শর্মিলা মিত্র, শুভজিত চট্টোপাধ্যায়, শেখ সিরাজউদ্দিন, মহুয়া বিশ্বাস ও চৈতালি ভট্টাচার্য।