Kode Iklan atau kode lainnya

ক্ষেতমজুরের কাজ করে অক্সফোর্ডে পড়াশোনা, শেষে দেশে ফিরে চাষির মেয়ে ইলমা হলেন আইপিএস অফিসার!

 ইলমা আফরোজ

নিউজ ডেস্ক: ক্ষেতমজুরের কাজ করে অক্সফোর্ডে পড়াশোনা, শেষে দেশে ফিরে চাষির মেয়ে হলেন আইপিএস অফিসার! স্বপ্ন তো দেখাই যায়। স্বপ্নকে সত্যি করতে পরিশ্রম করেন বা করতে পারেন ক’জন! মেয়েটি ওই ক’জনের অন্যতম। নাম ইলমা আফরোজ। ছোট বেলায় ক্ষেতমজুরের কাজ করতেন। এখন তিনি আইপিএস।

নিউ ইয়র্কে বড় চাকরি পেয়েছিলেন ইলমা। বিলাসবহুল আর আরামদায়ক জীবনের চৌকাঠে এসে দাঁড়িয়েছিলেন। সমাজের যে স্তর থেকে ওই জায়গায় পৌঁছেছিলেন ইলমা, তাতে চাইলে ওখানেই থেমে যেতে পারতেন। তাঁর পরিবারের দায়িত্ব নেওয়ার লক্ষ্যও পূরণ হত। কিন্তু ইলমা থামেননি।

২৩ বছর বয়সে দেশে ফিরে আসেন। যুক্তি ছিল, যা করবেন দেশে থেকে দেশের জন্য করবেন। একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তাঁর পড়াশোনা এবং তাঁর কাজের উপর যদি কারও অধিকার থেকে থাকে, তবে তা তাঁর দেশের মাটির। ইলমার কথায়, ‘দেশ কি মিট্টি’।

বাবা ক্ষেত মজুরির কাজ করতেন। কিন্তু ইলমার বয়স যখন ১৪, তখন তিনি ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। কিশোরী মেয়ে এবং আরও ছোট ছেলের ভার এসে পড়ে একা মায়ের কাঁধে। বাধ্য হয়ে তিনিও ক্ষেত মজুরির কাজ শুরু করেন। মাকে কাজে সাহায্য করতেন ইলমা। ক্ষেতে তিনিও কাজ করতেন। পড়াশোনা চলত তার ফাঁকে। বড় হয়েও সেই মাটির ঋণ ভোলেননি ইলমা।

উত্তরপ্রদেশের কুন্দারকি গ্রামের বাসিন্দা ইলমা। এখনও সেখানেই থাকেন। একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, পাড়ার লোক মাকে বুঝিয়েছিল, মেয়েকে তো শেষ পর্যন্ত সংসারই করতে হবে। এত পড়াশোনা করানোর দরকার কী! এখন তাঁরাই নিজের পরিবারের মেয়েদের ইলমা-র উদাহরণ দেন। ইলমা-র মতো হতে বলেন।

স্কুলের পাঠ কুন্দারকিতেই শেষ করেছিলেন ইলমা। তবে গ্র্যাজুয়েশনের জন্য দিল্লিতে আসার সিদ্ধান্ত নেন। দর্শন নিয়ে পড়ার ইচ্ছে ছিল। দিল্লির সেন্ট স্টিফেন্স কলেজে ভর্তির আবেদন করেছিলেন ইলমা। পরে বলেছেন, কুন্দারকির ঘেরাটোপ ছেড়ে দিল্লির কলেজে ভর্তি তাঁর জীবনের সেরা সিদ্ধান্ত ছিল। ওই একটি সিদ্ধান্তই তাঁর জীবনকে সঠিক পথে এনে ফেলে।

সেখান থেকেই দেশে ফেরার ভাবনা। ইলমা ঠিক করেন ইউপিএসসি-র জন্য প্রস্তুতি নেবেন। ২০১৭ সালে ইউপিএসসি-তে উত্তীর্ণ হন। গোটা দেশে ২১৭তম হয়েছিলেন ইলমা। পরে তাঁকে যখন পছন্দের বিভাগ বেছে নিতে বলা হয়, তখন ইন্ডিয়ান পুলিশ সার্ভিসকেই বেছে নেন তিনি। ২০১৮ সালে আইপিএস অফিসার হিসাবে যোগ দেন।

আইপিএস অফিসারের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ছোটদের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও চালান ইলমা। ‘হোপ’ নামে সেই সংস্থার কাজ ছোটদের স্বপ্নে উড়ান দেওয়া। যাতে স্বপ্নপূরণে বাধা না থাকে।

দেশের আগামী প্রজন্মের প্রতি ইলমার বার্তা, ‘‘দেশের জন্য কাজ করে দেশের সাফল্যের কারণ হওয়ার চেষ্টা করো। দেশের জন্য পরিশ্রম করো। দেশকে ভালবেসে কাজ করো।’’ ইলমা বুঝিয়েছেন, বড় হওয়ার স্বপ্ন বৃহত্তর ভাবনা থেকেই পূরণ হওয়া সম্ভব।

তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা

close